শাহ্‌পীর চিশ্‌তীর রওজা জেয়ারত

by Imamia Chistia Nezamia Sangha


Books & Reference

free



ফেনী জেলার দাগনভুইয়া থানার বারাহীগুনি গ্রামে আমাদের মোর্শেদ ক্বেবলার যে রওজা স্থাপিত হইয়াছে তাহা ছিল...

Read more

ফেনী জেলার দাগনভুইয়া থানার বারাহীগুনি গ্রামে আমাদের মোর্শেদ ক্বেবলার যে রওজা স্থাপিত হইয়াছে তাহা ছিল প্রথমে খাজা চিশ্তী আজমেরীর নির্দেশ ক্রমে প্রতিষ্ঠিত খাজারই দরবার। এই দরবারের তিন দিকের তিনটি দরওয়াজার নামকরণ আজমেরী খাজাবাবার আদেশক্রমে তাঁর আজমীরস্থ রওজার দরওয়াজা তিনটির নাম অনুযায়ী একই রূপ নামে নামাঙ্কিত করা হইয়াছে। পূর্ব দুয়ারের নাম শাহী দরওয়াজা, দক্ষিণ দুয়ারের নাম সুলতানী দরওয়াজা এবং পশ্চিম দুয়ারের নাম বেহেস্তী দরওয়াজা। এগুলির অবস্থান ও গুরুত্বের বিষয়টি পরে বর্ণিত হইবে।ক্বাবার তোয়াফ করিতে চাহিলে ইহাকে বামে রাখিয়া তোয়াফ করিতে হয়। অপর পক্ষে কামেল মহাপুরুষের তোয়াফ অথবা তাঁহার রওজা তোয়াফ করিলে উহাকে ডানদিকে রাখিয়া তোয়াফ করিতে হয়।কাবা মানব দেহের প্রতীক। মানব দেহ লোভ, দ্বেষ, মোহ, হিংসা, ক্রোধ ইত্যাদি পরিত্যাজ্য দোষের সমষ্টি। এই দোষগুলি পরিত্যাগ করার উদ্দেশ্যে আপন সত্তার মধ্যে এগুলির উদয় বিলয় সম্বন্ধে সজাগ থাকিতে হয়। সপ্ত ইন্দ্রিয় দ্বার দিয়া যে সব বিষয়াশয়ের আগমন ও প্রত্যাগমন হইতেছে তাহা খুঁটিয়া খুঁটিয়া এক এক করিয়া দেখিয়া শুনিয়া চিহ্নিত করিতে থাকিলে এই বিষয়গুলি দুর্বল হইয়া যায়, অর্থাৎ মস্তিষ্কের মধ্যে মোহের ছাপ লাগাইতে পারে না। এই প্রক্রিয়ার নাম আত্মদর্শন বা কাহাফের ধ্যান সাধনা।স্থুল দেহ দুর্বলতার প্রতীক এবং পরিণামে ইহা পরিত্যাজ্য। দুর্বলকে বামে রাখিতে হয়। ইহাকে সম্মানের ও শ্রদ্ধার সহিত তোয়াফ করা যায় না। ইহার মধ্যে বিপদজনক কোন্ কোন্ বিষয় আছে তাহা সম্যক জানিবার জন্যই এই তোয়াফ : যাহাতে ভুল ক্রমেও উহাদের কোন একটি বিপদও আমাদের উপর চাপিয়া বসিতে না পারে। অতএব পরিত্যাজ্য আপন ক্বাবা হইল ভীষণ ভয় ভীতির বিষয়। ক্বাবায় তথা দেহে অবস্থিত অবাঞ্ছিত দোষ ত্রুটিগুলি হারাম জানিয়া সম্পূর্ণ দূর করিয়া ফেলিতে পারিলে ইহা মসজিদুল হারাম হইয়া যায়। অর্থাৎ সেজদার যোগ্য স্থানরূপে পরিগণিত হইয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে মসজিদুল হারাম একজন পরিশুদ্ধ কামেল পুরুষ, যদিও আন্তর্জাতিক প্রয়োজন হিসাবে চিহ্নিত করা স্থান ক্বেবলাকেও ঐ একই নামে চিহ্নিত করা হইয়াছে। এইজন্য ক্বাবাকে ক্বাবারূপে নয়, মসজিদুল হারামরূপে ক্বেবলা করিতে হয়।যদিও মসজিদুল আকসা প্রসঙ্গ আমাদের জন্য এখানে প্রাসঙ্গিক কথা নয়, তথাপি বলিয়া রাখা ভাল যে উহাকে ডানদিকে রাখিয়া তোয়াফ করিতে হইবে।এখন আমরা মূল কথায় ফিরিয়া যাইতেছি। শরীয়তের বিধান অনুযায়ী কোন মহাপুরুষের মাজার অথবা আপন মোর্শেদের মাজার জেয়ারত করিতে গেলে আমাদের দেশে অর্থাৎ ক্বাবার পূর্বাঞ্চলীয় দেশসমূহে পশ্চিম দিকে অথবা দক্ষিণে পায়ের দিকে বসিয়া অথবা দাঁড়াইয়া জেয়ারত কর্ম করিতে হইবে। এর কারণ, উপস্থিত সম্মুখ ক্বেবলা হইল আমাদের জন্য প্রথম ক্বেবলা যাহাকে উপলক্ষ্য করিয়া আমাদের সাধন জগতের শিক্ষা ও ভ্রমণের শুরু হইয়াছে।খাজা আজমেরীর আদেশ নির্দেশে আমাদের মোর্শেদ ক্বেবলা, খাজার মানস সন্তান, তাঁহার নিজ গ্রামে “দরবারে খাজা” প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন এবং মানবজীবনের অবসানে ইহার মধ্যে তিনি শেষ দেহ রাখিয়াছেন। সুতরাং ইহা তাঁহার ভক্তগণের জন্য পরিপূর্ণভাবে “দরবারে খাজা।”দক্ষিণ দুয়ার, যার নাম সুলতানী দরওয়াজা, তার আরও একটু দক্ষিণে প্রতিষ্ঠিত রহিয়াছে মোর্শেদ ক্বেবলার আসন, যেখানে বসিয়া তিনি দরবারের সকল কর্মকা- পরিচালনা করিতেন। সুতরাং এই আসনকেও দরবারের অংশরূপে গ্রহণ করিয়া তোয়াফ কর্ম সম্পাদন করা কর্তব্য।